সাম্প্রতিক লেখাগুলো

বুদ্ধদেব বসুর অগ্রন্থিত কবিতা "নবযৌবন"

নবযৌবন

বেদনায় রাঙা মোর দগ্ধ বুক ভরি’
যুগ হতে যুগান্তর ধরি’
কি গান উঠেছে বাজি’, কি সঙ্গীত তুলিয়াছে তান
কোন্ মহামায়া মন্ত্র তুলিয়াছে নিত্য নব গান,
কি সঙ্গীত উঠিয়াছে ধ্বনিয়া
মর্ম্ম মাঝে রণিয়া-রণিয়া,
ওগো মহাকাল,
হে সুন্দর, নিষ্ঠুর, ভয়াল
তোমার ললাট ’পরে লেখা হয়েছিল যদি,
নিরবধি
বয়ে চলা ফল্গুধারা সম
ছিন্ন-তন্ত্রী এই বীণা মম
তোমার বুকের ’পরে জাগায়াছে যদি প্রতিধ্বনি
সে কথায় জেগে যদি উঠেছে অবনী,
তবে ওই ভীষণ মৌনতা
কেন আজ টুটিল তা?
কেন আজ ভেঙে গেল যুগান্তের শৃঙ্খল কঠিন?
প্রসন্ন নবীন
উদিল প্রভাত
অকস্নাৎ,
পোহাইল যেন দীর্ঘ দুঃখ-বিভাবরী,
কেটে গেল মরণ-শর্ব্বরী।

আর ভয় নাই, নাই ভয়,
জীবনে-মরণে আজ, প্রভু মোর, হোক তব জয়!
এনেছে যৌবন তার
বিচিত্র সম্ভার;
বসন্তের ফুলদল হাতে লয়ে এসেচে সে
নব-অতিথির বেশে।
তারে আজ করিনু বরণ,
তাহার পরশ পেয়ে ধন্য হ’ল আমার মরণ,
ধন্য হ’ল দুঃখ-দগ্ধ ক্লান্ত বিভাবরী,
তাই বক্ষ তরঙ্গিত করি,
উঠিয়াছে আনন্দ-হিল্লোল,
চিরন্তন সঙ্গীত কল্লোল
বক্ষে বাজে শঙ্খধ্বনি-সম,
নিরুপম
উচ্ছ্বাসের উন্নত্ত ধারায়,
জীবনের সুত্রগুলি আচম্বিতে কখন হারায়!

চিরদিনকার পাওয়া যৌবন আমার
লহ নমস্কার!
তুমি রুদ্র, তুমি ভয়ঙ্কর,
তাই তুমি অমন সুন্দর।
প্রবালের মতো তব রাঙা ওষ্ঠাধরে
চুম্বন আঁকিয়ে দিতে জন্ন-জন্নান্তরে
সাধ মোর;
অন্ধতার ঘোর
রাত্রির আকাশ সম সুনিবিড় কেশ,
ঊষার উদয় সম চক্ষে তব আনন্দ-উন্েনষ,
বক্ষে তব নবজন্ন আশা
মুখে তব বিশ্বসৃষ্টি ভাষা
সারা দেহে লীলায়িত গভীর বেদন
অনন্ত জীবন আর নিবিড় মরণ
নমি তোমা বার বার, হে আমার অনন্ত যৌবন।

সংগ্রহ ও ভুমিকা: সৈয়দ আবুল মকসুদ
বুদ্ধদেব বসু ঢাকায় ছিলেন ‘মাত্র সাড়ে নয় বছর’ কিন্তু তা ছিল তাঁর ‘জীবনে সবচেয়ে সগর্ভ ও প্রভাবশালী’। ওয়ারি, যুগীনগর ও পুরানা পল্টনে ছিলেন তিনি। ম্যাট্রিক পাস করেন কলেজিয়েট স্কুল থেকে। সাহিত্যজীবনের প্রথম পর্বে পুরানা পল্টন থেকে প্রগতি বের করেন। ঢাকায় আরও দু-একটি সাহিত্য পত্রিকার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং তাতে নিয়মিত লিখতেন। তাঁর আমার ছেলেবেলা এবং আমার যৌবনে প্রথম জীবনের সব কথা আসেনি। সেকালের ঢাকার পত্রপত্রিকা এবং তাঁর স্কুল-কলেজের সহপাঠীদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে রচিত আমার গবেষণাগ্রন্থ বুদ্ধদেব বসু: প্রস্তুতি পর্ব, প্রগতি ও পুরানা পল্টন-এ তাঁর শৈশব ও প্রথম যৌবনের অনেক অজানা তথ্য এবং তাঁর অপ্রকাশিত-অগ্রন্িথত বেশ কিছু লেখা থাকবে। প্রকাশিত হবে ডিসেম্বরে।
‘নবযৌবন’ বেরিয়েছিল ঢাকা থেকে প্রকাশিত মাসিক উপাসনায় (অগ্রহায়ণ ১৩৩১)।

1 মন্তব্য:

  Pijush Kanti Das

March 3, 2017 at 5:27 PM

জন্ম বানান গুলো ভুল হয়ে আছে